এন.এইচ নুয়েল,স্টাফ রিপোর্টার : সাদা পাথরের স্বচ্ছ জলে গা ভেজাতে কার না মন চায়। জল-পাথরের কলতান, উঁচু উঁচু পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে সারা বছরই আকর্ষণীয়। আর তাই এবারের ঈদের ষষ্ঠ দিনেও পর্যটকে মুখর ছিলো সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় স্থান সাদা পাথর।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় অবস্থিত সাদা পাথরের পরশ নিতে ভিড় করেন ভ্রমণপিপাসুরা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, সাদা পাথর ও ভোলাগঞ্জ দশ নম্বর এলাকায় পর্যটকদের প্রচন্ড ভিড়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটিতে সাদা পাথর যেন ভ্রমণপিপাসুদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। অনেকেই দল বেধে এসেছেন। সাদা পাথরের স্বচ্ছ জলে গা ভেজানোসহ নিজেদের আনন্দের মুহূর্তকে অনেকেই সেলফিবন্দি করে রাখছেন। কেউ বা ছাতার নিচে চেয়ারে বসে খোশগল্পে মেতে উঠেছেন পরিবার পরিজনের সঙ্গে।
সেখানে কথা হলে পর্যটকরা জানাচ্ছিলেন নিজেদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। এই যেমন ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন মাওলানা মো. ইয়াছিন। বললেন ‘সাদা পাথর খুবই সুন্দর। আগে বন্ধুদের সাথে এসেছিলাম। এবার পরিবার নিয়ে আসলাম।’
নরসিংদী থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আসা রকিবুল ইসলাম বলেন- ‘সাদা পাথরে আসার সড়কের জার্নিটাও বেশ উপভোগ্য। বিআরটিসির দুতলা বাসে নিরাপদে আসা যায়। সাদা পাথর আগেও দেখেছি। খুবই সুন্দর। ভালো লেগেছে। তবে এলাকাটিকে আরও মোহনীয় করে তুলতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে আসা সজল কান্তি বলেন, ‘সিলেটের পাহাড় পর্বত দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সাদা পাথর দেখার খুব আগ্রহ ছিল। তাই ঈদের ছুটিতে ঘুরতে চলে আসলাম।’
ফিরোজপুর থেকে আসা তরুণ মো. ইব্রহিম বললেন- ‘বাংলাদেশের অনেক প্রান্তেই ঘুরে বেড়িয়েছি। এই জায়গাটার চমৎকার সব ছবি ফেইসবুকে দেখি। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। আজ আসলাম। অপূর্ব সুন্দর।’
এদিকে, ভেলাগঞ্জ দশ নম্বর এলাকার রেস্তোরাঁ ও কসমেটিকসের দোকানগুলোতে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের বেচা বিক্রি ভালো হয়েছে। মেঘের বাড়ি রেস্তোরাঁর মালিক সফাত উল্লাহ বলেন, ‘এই ঈদে পর্যটকদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। ষষ্ঠ দিনে ৫২ হাজার টাকার ব্যবসা করেছি।’
কসমেটিকস এর দোকান নিয়ে বসা বিলাল আহমদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ এবার ভালো ব্যবসা হয়েছে।’
দশ নম্বর এলাকায় ভাসমান চশমার দোকান নিয়ে বসেছেন পাড়ুয়া গ্রামের বদরুল। মাস ছয়েক আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার ডান পা ভেঙে যায়। পায়ে লোহার পাত নিয়েই শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বদরুল বলেন, বৃহস্পতিবার তার প্রায় পাঁচ হাজার টাকার বিকিকিনি হয়েছে। ঈদের পরদিন থেকে গড়ে চার হাজার টাকার চশমা বিক্রি হয়েছে।
ভালো আয় হয়েছে ফটোগ্রাফারদেরও। ফটোগ্রাফার আব্দুল বারী জানায়, ঈদের পরদিন থেকে গড়ে দুই হাজার টাকা করে তার আয় হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৮ হাজার টাকার আম, জাম, আনারস ও বড়ইয়ের আচার বিক্রি করেছেন ভোলাগঞ্জ রুস্তমপুর গ্রামের সোহাগ বিশ্বাস। পাড়ুয়া গ্রামের ডাব বিক্রেতা আলা উদ্দিন ২০০ ডাব বিক্রি করেছেন। আগের দিন বিক্রি করেছেন ৩০০ ডাব। প্রতিটি ডাবের দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা।
সাদা পাথর হোটেল এন্ড রিসোর্টের পরিচালক আলহাজ্ব মো. আলকাছ আলী বলেন, এবারের ঈদে প্রতিদিনই রিসোর্টের কক্ষগুলো বুকিং যাচ্ছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী ইনকাম হবে বলে আশা করছি।
পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। সিলেট রিজিয়নের পুলিশ পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন। আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন
Leave a Reply