সিলেটের আলো ডেস্ক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) বৈঠকটি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টা) বৈঠক শেষ হয়। বৈঠক শেষে যৌথ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার দিকে যৌথ ব্রিফিং হয়। এতে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ।
যৌথ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অলরেডি সিদ্ধান্ত আছে যে ঐক্যমতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে। সংস্কারের ব্যাপারেও একই উত্তর দিতে হয়। ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সংস্কার ও জুলাই সনদ দুইটাই করবো। এটা আমি খুব নিশ্চিত, এটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই হবে।’
নির্বাচনের সঠিক তারিখ ঘোষণা নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন সম্পর্কে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি দু’পক্ষই এবং নির্বাচন কমিশন আশা করি খুব শিগগিরই একটা তারিখ ঘোষণা করবে।’
বৈঠকে নির্বাচন নিয়েই নির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে, নাকি অন্যসব বিষয়েও হয়েছে- এমন প্রশ্নে আমির খসরু বলেন, ‘সব বিষয়ে আলোচনা তো হবে স্বাভাবিক। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছি। সবাই আমরা চাই, দেশ গড়ার প্রত্যয় যে আমরা নিয়েছি; ঐক্যবদ্ধভাবে সে কাজটা করবো। শুধু নির্বাচনের আগে নয়; নির্বাচনের পরেও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে আমরা সবাই ঐক্যমত হয়েছি, এটা আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’
সংস্কার নিয়ে যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে, সেটা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কী মতামত দেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা পরিষ্কার, না বোঝার কোনো কারণ নেই। বিষয়টা হচ্ছে, সংস্কার- চিফ অ্যাডভাইজর সাহেব, তারেক রহমান সাহেব আমরা সবাই একই কথা বলেছি; যে বিষয়গুলোতে ঐক্যমত হবে, সেগুলোই সংস্কার হবে। সংস্কারের বিষয় একটা চলমান প্রক্রিয়া। এমনটা না যে, সব সংস্কার এখনই হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগেও সংস্কার হবে, যেখানে ঐক্যমত হবে। নির্বাচনের পরেও সংস্কার হবে। কারণ আমরা যে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি; সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করতেছে।’
তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, এমন আলোচনা হয়েছে কি না। উত্তরে খসরু, এ ব্যাপারে কোনো আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, সেটা আমরা মনে করছি না। তারেক রহমান যখন ইচ্ছে তখন দেশে ফিরে যেতে পারবেন। সুতরাং এটার সিদ্ধান্ত উনি নেবেন সময়মত।
প্রশ্ন করা হয়, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না? উত্তরে খসরু বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখানে আলোচনার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
এ বিষয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘এটা তাদের (এনসিপি) জিজ্ঞেস করুন। প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব মতামত আছে। তবে আমরা সবাইকে নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি।’
আরেকজন প্রশ্ন করেন, তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে এপ্রিলে ঘোষিত যে নির্বাচনের রূপরেখা, সেখান থেকে সরকার কিছুটা সরে আসতে চাচ্ছে বা আসবে? উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ ঘোষণায় এই বিষয়টি সুস্পষ্টই বলা আছে। আপনারা শুনেছেন। যদি সব কাজ সময়মতো আমরা করতে পারি এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সেটা করা যেতে পারে।’ এরপর আমীর খসরু বলেন, ‘বৈঠকটা প্রথমে আমাদের দুই সাইডের ডেলিগেশনের সঙ্গে হয়েছে এবং পরে তারা দু’জন (অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান) ওয়ান-টু-ওয়ান দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা কি সন্তুষ্ট?’ এর উত্তর সমস্বরে দেন খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু মাহমুদ। দু’জনই বলেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।’ এর সঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা তো বলছি নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরও নতুন বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনের শেষ বাক্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে তো যৌথ ঘোষণা আসার কথা নয়।’
চার দিনের সফরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। আর ২০০৮ সাল থেকে সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। সেখান থেকে তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সোমবার সরকার ও বিএনপির তরফ থেকে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এ বৈঠক নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ফলে সবার চোখ এখন লন্ডনের এ বৈঠকের দিকে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ বৈঠককে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন।
দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মী এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায়। ইতোমধ্যে তিনি সব মামলা থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে আসতে কোনো সমস্যা নেই। ফলে এ বৈঠক নিয়ে যে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে, তার সঙ্গে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ও যুক্ত হয়ে গেছে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বই ও কলম উপহার দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার কিছু আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই উপহারের ছবি পোস্ট করেছেন।
শফিকুল আলমের পোস্টে দেখা গেছে, তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে একটি কলম ও দুটি বই উপহার দিয়েছেন। একটি বই হলো পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের ‘নো ওয়ান ইস টু স্মল টু মেক অ্যা ডিফারেন্স’। আরেকটি বই ‘নেচার ম্যাটারস’।
Leave a Reply