সিলেটের আলো ডেস্ক : ইরানের তেহরানে একাধিক ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত এবং আরও ৩২৯ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
একইসঙ্গে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে ৭৮ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া, হামলার ঘটনায় আরও ৩২৯ জন আহত হওয়ার তথ্যও জানানো হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটির টেলিগ্রাম চ্যানেলে করা এক পোস্টে বলা হয়েছে, এটি আনুষ্ঠানিক সংখ্যা নয়।
গতকাল শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েল এই বড় ধরনের হামলা চালায়।
তেহরানের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আয়োজিত একটি বৈঠকের একদিন আগেই এ হামলার ঘটনা ঘটল। অর্থাৎ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ভেস্তে দিতেই এই হামলা।
আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনার পর ইরান কড়া প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির মধ্যাঞ্চলের ইস্পাহান প্রদেশের নাতানজ শহরে যেখানে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে সেখানে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ২০০টির বেশি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে ৩৩০টিরও বেশি মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইরান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম ফেরেয়দুন আব্বাসি, যিনি ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এইওআই-এর সাবেক প্রধান ছিলেন।
এছাড়া, নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ মাহদি তেহরানচি। তিনি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তেহরানের ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই তালিকায় আরও আছেন আব্দোলহামিদ মিনৌচেহর, আহমাদ রেজা জোলফাঘারি ও আমিরহোসেইন ফেকহি। এদের প্রত্যেকেই তেহরানের শহীদ বেহেশতি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ছিলেন। ষষ্ঠ জনের পুরো নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। শুধু তার পদবী ‘মোতাল্লেবিজাদেহ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
পরমাণু বিজ্ঞানীরা ছাড়াও নিহতের তালিকায় রয়েছেন ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি ও খাতাম আল-আনবিয়া সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারের কমান্ডার ঘোলামালি রশীদ।
এদিকে, আইডিএফ-র মুখপাত্র ইফি ডেফরিনও বলেছেন, ইরান ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০টি মানবহীন ড্রোন ছুঁড়েছে। তবে এসব ড্রোন প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
এদিকে, ইসরায়েলের হামলার জবাব দিতে ইরান শতাধিক ড্রোন অ্যাটাক করে পালটা হামলার চেষ্টা চালালেও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। বেশিরভাগ ড্রোনই ইসরায়েল এবং জর্ডানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠেকিয়ে দিয়েছে।
টাইমস অব ইসরাইলের বরাত দিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কার্টজ জানিয়েছেন, ইরানে বিমান হামলা চালানোর পর পুরো ইসরায়েলজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকদের যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে দেশটির সরকার।
ইসরায়েলের বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুলফজল শেকারচি বলেছেন, মার্কিন সহায়তায় চালানো এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে নির্মম পরিণতি ভোগ করতে হবে।
Leave a Reply